Blog Details


Dr. Juwel Saha

এমবিবিএস, সিসিডি, ডিএমইউ, এমপিএইচ প্রেটেশিয়ান ইন ফ্যামিলি মেডিসিন।

Bluemount Hospital and Diabetes pvt, Ltd

IUI চিকিৎসা: সন্তান লাভের আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি

  • Posted on June 19, 2025

  • |
  • Published in

  • 04:06 PM

আজকের দিনে বন্ধ্যাত্ব (Infertility) একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। বহু দম্পতি নানা কারণে সন্তান লাভে ব্যর্থ হচ্ছেন এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে এখন অনেক আধুনিক কার্যকর পদ্ধতি এসেছে, যার মাধ্যমে সন্তান লাভের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে। তেমনই একটি পদ্ধতি হলো IUI, যার পূর্ণরূপ Intrauterine Insemination বাংলায় একে বলা যায়গর্ভাশয়ে শুক্রাণু প্রবেশ করানোর চিকিৎসা।


IUI চিকিৎসা কী?

IUI চিকিৎসা হলো একধরনের সহায়ক প্রজনন পদ্ধতি (Assisted Reproductive Technique) এতে পুরুষের শুক্রাণু সংগ্রহ করে সেটিকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করে সরাসরি নারীর গর্ভাশয়ে প্রবেশ করানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় শুক্রাণু ডিম্বাণুর সংযোগের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়, ফলে গর্ভধারণ সহজ হয়।

স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়, মিলনের সময় শুক্রাণু নারীর যোনিপথ দিয়ে গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে এবং ডিম্বাণু নিষিক্ত করে। কিন্তু যদি শুক্রাণু দুর্বল হয়, পরিমাণে কম হয়, অথবা জরায়ুর শ্লেষ্মা খুব ঘন হয়তাহলে নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। IUI এই ধরনের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।


কারা IUI চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত?

সব দম্পতির জন্য IUI উপযুক্ত নয়। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক IUI করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন:

1.      পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত বা পরিমাণগত সমস্যা:
যদি স্পার্ম কাউন্ট কম হয় বা গতি কম থাকে।

2.      নারীর জরায়ুর মুখে শ্লেষ্মার সমস্যা:
যেখানে ঘন শ্লেষ্মা শুক্রাণুর প্রবেশে বাধা দেয়।

3.      এন্ডোমেট্রিওসিসের হালকা সমস্যা:
এই ক্ষেত্রে IUI তুলনামূলকভাবে কার্যকর।

4.      অনিয়মিত ওভুলেশন:
যেমনপলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) থাকলে।

5.      অজানা কারণের বন্ধ্যাত্ব (Unexplained infertility):
যেখানে সব রিপোর্ট ঠিক থাকার পরেও গর্ভধারণ হচ্ছে না।

6.      ডোনার স্পার্ম ব্যবহারকারী নারী:
যেমন একক মা (Single mother) বা সমলিঙ্গ দম্পতি।


IUI চিকিৎসার ধাপসমূহ

IUI একটি ছোট কিন্তু পরিকল্পিত চিকিৎসা পদ্ধতি। এটি সাধারণত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

. ওভুলেশন ট্র্যাকিং:

নারীর মাসিক চক্র পর্যবেক্ষণ করা হয়। অনেক সময় ওভুলেশন (ডিম্বাণু নির্গমন) বাড়াতে ওষুধ দেওয়া হয়। সাধারণত ক্লোমিফেন সাইট্রেট বা গোনাডোট্রপিন দেওয়া হয়।

. ডিম্বাণুর পরিপক্বতা নিরীক্ষণ:

আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ডিম্বাণু পরিপক্ব হয়েছে কিনা দেখা হয়। কখনো কখনো ‘trigger shot’ (HCG ইনজেকশন) দিয়ে ওভুলেশনকে উদ্দীপিত করা হয়।

. শুক্রাণু সংগ্রহ:

পুরুষের শুক্রাণু নির্দিষ্ট দিনে সংগ্রহ করা হয়। এটি সাধারণত হস্তমৈথুনের মাধ্যমে ক্লিনিকে নেওয়া হয়।

. স্পার্ম প্রসেসিং:

ল্যাবরেটরিতে শুক্রাণুকে ধুয়ে সুস্থ শক্তিশালী স্পার্ম আলাদা করা হয়। এই ধাপে মৃত বা দুর্বল স্পার্ম ফেলে দেওয়া হয়।

. ইনসেমিনেশন (গর্ভাশয়ে স্পার্ম প্রবেশ করানো):

চিকিৎসক একটি সরু ক্যাথেটার ব্যবহার করে স্পার্মকে সরাসরি নারীর গর্ভাশয়ে প্রবেশ করিয়ে দেন। এই প্রক্রিয়া খুবই দ্রুত এবং ব্যথাহীন।

. পরবর্তী পর্যবেক্ষণ:

প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার সপ্তাহ পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়।


সফলতার হার

IUI চিকিৎসার সফলতা নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের ওপর। যেমন:

·         নারীর বয়স

·         শুক্রাণুর গুণমান

·         ওভুলেশন ঠিকমতো হচ্ছে কি না

·         অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা

সাধারণভাবে প্রতি চক্রে IUI-এর সফলতার হার প্রায় ১০% থেকে ২০% পর্যন্ত হতে পারে। যদি নারীর বয়স ৩০-এর নিচে হয় এবং বড় কোনো জটিলতা না থাকে, তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

চিকিৎসকরা সাধারণত পরপর থেকে ৬টি চক্র পর্যন্ত IUI করতে বলেন। এর পরেও যদি সফলতা না আসে, তাহলে IVF বা ICSI-এর মতো উন্নত পদ্ধতির পরামর্শ দেওয়া হয়।


IUI-এর সীমাবদ্ধতা

·         টিউব এক বা দুইটি বন্ধ থাকলে IUI কাজ করবে না

·         গুরুতর স্পার্ম সমস্যা থাকলে সফলতার সম্ভাবনা কম

·         সফলতার হার তুলনামূলকভাবে কম (IVF-এর চেয়ে)

·         নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই কার্যকর


চিকিৎসার খরচ

বাংলাদেশে IUI চিকিৎসার খরচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, তবে শহরের কিছু ফার্টিলিটি সেন্টারে  ক্লিনিক, ডাক্তার, ব্যবহৃত ওষুধ ল্যাব সুবিধার ওপর নির্ভর করে খরচ  বেশি হতে পারে

বন্ধ্যাত্ব মানেই আশাহীনতা নয়, IUI চিকিৎসা একটি কার্যকর, নিরাপদ তুলনামূলকভাবে সহজ সন্তান প্রাপ্তির পদ্ধতি। যেসব দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হচ্ছেন, তারা IUI চিকিৎসা গ্রহণ করে একটি নতুন আশার আলো দেখতে পারেন। তবে অবশ্যই চিকিৎসা শুরু করার আগে একজন অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিস্ট বা প্রজনন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।


সন্তান লাভ শুধু একটি শারীরিক প্রক্রিয়া নয়এটি আবেগ, ধৈর্য পারস্পরিক সমর্থনের ব্যাপার। তাই চিকিৎসা চলাকালীন সময়টুকুতে মানসিকভাবে শক্ত থাকা, পরস্পরের পাশে থাকা এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই আপনাকে সফলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

 


Releted Post

MALE FERTILITY TESTING…
  • February 28, 2023.
    11:02 AM
What is Epilepsy?
  • February 05, 2023.
    03:02 PM
EATING TO FUEL FERTILITY
  • February 02, 2023.
    02:02 PM
IVF MYTHS AND FACTS YOU…
  • January 28, 2023.
    04:01 PM
FIBROIDS AND INFERTILITY
  • January 23, 2023.
    12:01 PM
EATING TO FUEL FERTILITY
  • January 23, 2023.
    12:01 PM
MALE FERTILITY TESTING…
  • January 19, 2023.
    02:01 PM
PELVIC CARE AFTER CHILDBIRTH
  • January 13, 2023.
    12:01 PM
SEXUAL HEALTH PROBLEMS…
  • January 12, 2023.
    11:01 AM